যান্ত্রিকতা কি যন্ত্রের জন্য? নাকি যন্ত্রটা সৃষ্টি হয়েছে যান্ত্রিকতার জন্য? যন্ত্র আর যান্ত্রিকতার পরেই সৃষ্টি হয়তো যন্ত্রাংশ কিংবা যন্ত্রনার। কার তরে কার বসবাস বলতে পারাটাও এক ধরনের যান্ত্রিকতা। যান্ত্রিকতার ধারায় জর্জরিত হতে হতে একটা সময় সেই মানুষটা যন্ত্র হয়ে যায়, সেই যন্ত্রটা তখন যান্ত্রিকতায় আবর্তিত না হয়ে যন্ত্রাংশ হয়ে দেখা দেয়। ওয়াশিং মেশিন দিয়ে যেমন ফটোকপি হয় না ঠিক তেমন ফটোকপি মেশিন দিয়ে ওয়াশিং হয় না। মনটা যখন যান্ত্রিকতায় পড়ে যন্ত্র হয়ে যায় তখন তার মাঝে আর অবশিষ্ট ভালবাসা গুচিয়ে রাখাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না, থাকে শুধু প্রয়োজনীয়তার আবসান মিটানো। বাবা মায়ের খুব আদরের মাঝে বেড়ে উঠা ছেলেটা, যে নাকি কখনো কস্ট আর অভাব দেখেনি। সেই ছেলেটাই যখন বাস্তবতার তাড়নায় কোনো এক ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায়, তখন সভ্য জগৎ তার কাছে অসভ্য মনে হয়,প্রেম ভালবাসা গুলো লাগে কৌতুকের মত। না বলছি না তার মাঝে ভালবাসা নেই, অবশ্যই থাকে তবে সেই ভালবাসাটা চাপা পড়ে যায় যন্ত্র,যান্ত্রিকতা কিংবা যন্ত্রনার রসাতলে।
সকল কিছুকে চাপা দিয়ে সেও চায় ফিরে যেতে মধুর সময়ে,ফিরে পেতে চায় কিছুটা আবেগ, ফিরে পেতে চায় আদর মাখা যত্ন কিংবা কোমল হাতে আগলে ধরা কাউকে।
কাছে পেতে চায় ভাল লাগা প্রিয় মানুষটাকে কিন্তু ভাগ্য মহাশয় হয়তো বারবার মুচকি হেঁসে জানান দিয়ে যায় বধিরের জন্য যেমন হেডফোন নয়। অন্ধের জন্য যেমন চশমা নয় তেমনি বোবার জন্য স্পিকার নয় ঠিক যন্ত্রের জন্য ভালবাসা নয়। একে পর এক,আবার দুয়ের পর এক, হারানোর সংখ্যা যখন যোগফলে যোগ হয় তখন একটা সময় এসে আর হিসেব মিলাতে বসা হয় না। যুক্ত হবে এটাই নিয়তির ফলাফল।
তাই কেউ যদি বলে নতুন করে কিছু হারাতে হবে তখন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চোখের কোনে জমাট বাধা জল রাশি মুছে মলিন একটা হাঁসির আঁড়ালে লুকিয়ে বলতে হয় আমার কিছু নেই হারাবার। নতুবা আমারতো কিছু ছিলোই না হারানোর ভয় কিসের? প্রশ্নের জবাব নেই, প্রশ্নবোধক চিহ্নটা কথামালার শেষে এসে দাঁড়িয়ে যাবে,জবাবহীন যান্ত্রিকতায় ভুলে যেতে হয় হারিয়ে ফেলার যন্ত্রনা কিংবা অলিখিত গল্পে যোগফলের সংখ্যাটা বেড়েই যাবে। আমি হিসেব না করে যন্ত্র মানব হয়ে বেঁচে রবো হয়তো আর কয়েকটা দিন কিংবা অল্প কিছু সময়। তারপর হারিয়েই যাবো নিজের মত করে এই যান্ত্রিকতার শহর থেকে দূরে বহু দূরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন