শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

নেশা !

"নেশা"

বাপজান,
আশাকরি কুশলেই আছেন
পর সমাচার এই যে....,
সেদিন আপনি যে কান্ডটি করিলেন
তার জন্য এই পত্রটি না লিখিয়া পারিতেছি না।
দেখিতেছি যতই বয়স বাড়িতেছে,ততই আপনার কান্ডজ্ঞান
একেবারেই লোপ পাইতেছে।
আপনি কি করিয়া সেদিন-আমার ড্রইংরুমে
অর্থাৎ বৈঠকখানায় বেমোক্কা ঢুকিয়া পড়িলেন,
বুঝিলাম না
সারাগায়ে ঘামের গন্ধ,ময়লা তেল চিপচিপে পান্জাবী
বগলে ছেঁড়া ছাতা,মাথায় চিতিপড়া কিস্তি টুপি,
যেন,আকবর বাদশার ঊষনিশ আর-কি।
হাতে মাটির হাঁড়ি,সর্বোপরি দু'পায়ের চামড়ার
কুচকুচে কালো রং,বোধহয় লজ্জায় ঢাকিয়া ফেলার আশায়
রাস্তার সবটুকু ধূলি মাখাইয়া
পা দু'টি কে মনে হইতেছিলো চুনকাম করাইয়াছেন।
কী লজ্জা,আপনার ঐ মূর্তি দেখিয়া আমার বন্ধুগন
এবং তাদের সুন্দরী স্ত্রী'রা,বজ্রাহতের মত তাকাইয়া রহিল।
যেন তারা চাক্ষুষ ভূত দেখিতেছে।

আর-আমার অবস্থাটা একবার ভাবিয়া দেখুন,
মান,সন্মান,মর্যাদা সব জাহান্নামে গেল
তাও না হয়,আপনি যদি দয়া করিয়া একটু চুপ থাকিতেন
তবু একটা কথা ছিলো।
তা- না,আপনার আবার আহল্লাদে মুখ দিয়া
কথার ফোয়ারা ছুটিতে লাগিলো-
বাবা,কেমন আছো? বৌমা কোথায়?
বলিহারি, ভাগ্যিস সেই মূহুর্তে ও সেখানটায় ছিলোনা
থাকিলে তো বেচারীর হার্ট এ্যাটাক হইয়া যাইতো,
সেতো আবার হঠাৎ কোন খারাপ দৃশ্য
মোটে ও সহ্য করিতে পারেনা,
বড় কোমল হৃদয়ের মানুষ কিনা।
বাপজান,তোমারে আমি সাবধান করিয়া দিতেছি
আর যাই করো,এইভাবে আমাকে ডুবাইওনা,
টাকা পয়সা লাগিলে চিঠি দিও,পারিলে পাঠাইবো,
আর- এত টাকা পয়সা ও যে কেন লাগে তোমাদের
তাও বুঝিনা।

তোমাদের আবার এত খরচ কীসের
ক্লাবে যাওনা,পার্টি দাওনা
ইসুবগুল আর চিরতার পানি ছাড়া
আর তো কোন নেশা ও করোনা।

এইটুকু পড়িয়া দরিদ্র স্কুল মাষ্টার পিতা
আনমনে বলিয়া উঠিলেন:-

"নেশা একটা আছে,বড় পুরোনো নেশা
কিছুতেই ছাড়তে পারিনা সেই নেশা
তোর জন্মের পর থেকে সারাক্ষন তোকে দেখার নেশা
কিছুতেই ছাড়তে পারিনা বাপ
কিছুতেই ছাড়তে পারিনা.......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন